Sunday, November 11, 2012

লালন ফকির, লালন শাহ, Lalon Fakir, Lalon Shah || 1772-1890

মরমী কবি লালন শাহ (১৭৭২-১৮৯০)             Back to ঝিনাইদহ জেলা
ঝিনাইদহ:: মরমী বাউল কবি লালনশাহ বাংলা বাউলকুলের শিরোমনিতাঁর মনীষার দীপ্তি দেশ ও কালের গন্ডী পেরিয়ে   চিরন্তনতায় সতত সঞ্চরণশীললোকায়ত বাংলার অন্যান্য অনেক প্রতিভাবানদের মতই তাঁর সঠিক পরিচয় আজও স্থিরীকৃত নয়তাঁর জম্মস্থান সম্পর্কে পন্ডিত ও গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছেতাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্য দুদ্দুশাহের বক্তব্য অনুযায়ী ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামে ১১৭৯ সালের ১কার্তিক (১৭৭২, ১৪ অক্টোবর) লালন শাহ জম্ম গ্রহণ করেনতাঁর পিতা দরীবুল্লাহ দেওয়ান, মাতার নাম আমিনা খাতুনলালন অতি শৈশবে পিতৃ মাতৃ হারা হয়ে ঐ গ্রামেই তাঁর এক আত্মীয় ইনু কাজীর বাড়িতে আশ্রয় লাভ করেন
এ সময় একদিন গোচারনরত অবস্থায় তিনি ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে এক গাছের ছায়ায় যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন ঐ পথে গমনকারী কুলবাড়িয়া গ্রামের সিরাজ সাঁইয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ও আলাপ হয়নিঃসন্তান সিরাজ সাঁই এতিম লালনকে পালক পুত্ররুপে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলে লালন তাতে সম্মত হনএভাবেই তিনি তার ভাবী জীবনের পথ প্রদর্শক গুরু সিরাজ সাঁই এর সান্নিধ্যে আসেনসিরাজ সাঁই জাতিতে মুসলমান এবং পেশায় পাল্কী বাহক বেহারা সম্প্রদায়ের লোক ছিলেনতিনি লালনকে লেখাপড়া শেখাবার চেষ্টা করেছিলেনলালন লেখাপড়া জানতেন নানিরক্ষর লালন বিষ্ময়কর তত্ত্বজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন
লালনকে সিরাজ সাঁই বাউল মতবাদে দীক্ষা দান করেনতিনিও গুরুর সাহচর্যে ক্রমে উক্ত তত্ত্বের বোদ্ধা রুপে গড়ে ওঠেনতাঁর ছাব্বিশ বছর বয়সে ১২০৫ সনে (ইংরেজী ১৭৯৮ সালে) সিরাজ দম্পত্তি পরলোকগমন করেনঅল্প দিনের মধ্যেই তিনি গৃহত্যাগ করে ফকিরী বেশে নবদ্বীপ অভিমুখে গমন করেননবদ্বীপ পৌছে তিনি পদ্মাবতী নামে এক বৈষ্ণব বিধবা রমনীর আশ্রয় লাভ করেন যাকে তিনি "মা' বলে ডাকতেনএখানে তিনি দীর্ঘ সাত বছর অতিবাহিত করেনলালন নবদ্বীপে যোগী ও তান্ত্রিক সাধকদের ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে আসেনএখানে তিনি বৈষ্ণব শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন, যা তাঁর বাউল মতবাদের উপর প্রভাব ফেলেছিল১৮০৫ সালে লালন নবদ্বীপ ত্যাগ করে কাশী, বৃন্দাবন, পুরী প্রভৃতি তীর্থে গমন করেনএমনিভাবে দশ বছর পরিভ্রমণের পরে তিনি ১৮১৫ সালে নদীয়ায় ফিরে উত্তর বঙ্গের খেঁতুরীর মেলা দেখতে যানখেঁতুরী থেকে ফেরার পথে তিনি গুটি বসন্তে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর সঙ্গীরা তাঁকে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রামে কালীগঙ্গা নদীর পাশে ফেলে রেখে যায়ঐ গ্রামের তাঁতী সম্প্রদায়ের মলম কারিগর অসুস্থ লালনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে মাসাধিককাল সেবাযত্বে সুস্থ করে তোলেনএ সময়ে তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়মলম কারিগর লালন শাহের সাধনা সম্পর্কে জ্ঞাত হবার পর তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিজ বাড়ীর ষোল বিঘা জমি লালনকে উইল করে দেনসেখানেই গড়ে উঠে লালনের আখড়ালালন শাহের পত্নীর নাম ছিল বিশখাতাঁর স্ত্রীর নাম সর্ম্পকেও গবেষকগণ একমত ননতাঁর কবর লালন শাহের কবরের পাশেই অবস্থিত১৮৯০ সালের ১৭ই অক্টোবর (১২৯৭সালের ১ কার্তিক) শুক্রবার ভোর পাঁচটায় ১১৬ বছর বয়সে লালন শাহ ছেঁউড়িয়ার আখড়ায় দেহত্যাগ করেনমৃত্যুকালে নিঃসন্তান লালন তাঁর স্ত্রী, পিয়ারী নামে এক ধর্মকন্যা এবং অসংখ্য শিষ্য ও ভক্ত রেখে যান

No comments:

Post a Comment