ঝিনাইদহ:: মরমী বাউল কবি লালনশাহ বাংলা বাউলকুলের শিরোমনি। তাঁর মনীষার দীপ্তি দেশ ও কালের গন্ডী পেরিয়ে চিরন্তনতায় সতত
সঞ্চরণশীল। লোকায়ত বাংলার অন্যান্য অনেক
প্রতিভাবানদের মতই তাঁর সঠিক পরিচয় আজও স্থিরীকৃত নয়। তাঁর জম্মস্থান সম্পর্কে পন্ডিত ও গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্য দুদ্দুশাহের বক্তব্য অনুযায়ী ঝিনাইদহ
জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামে ১১৭৯ সালের ১কার্তিক (১৭৭২, ১৪ অক্টোবর) লালন শাহ জম্ম গ্রহণ করেন। তাঁর
পিতা দরীবুল্লাহ দেওয়ান, মাতার নাম আমিনা খাতুন। লালন অতি শৈশবে পিতৃ মাতৃ হারা হয়ে ঐ গ্রামেই তাঁর এক
আত্মীয় ইনু কাজীর বাড়িতে আশ্রয় লাভ করেন।
এ সময় একদিন গোচারনরত অবস্থায় তিনি ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে এক গাছের ছায়ায় যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন ঐ পথে গমনকারী কুলবাড়িয়া গ্রামের সিরাজ সাঁইয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ও আলাপ হয়। নিঃসন্তান সিরাজ সাঁই এতিম লালনকে পালক পুত্ররুপে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলে লালন তাতে সম্মত হন। এভাবেই তিনি তার ভাবী জীবনের পথ প্রদর্শক গুরু সিরাজ সাঁই এর সান্নিধ্যে আসেন। সিরাজ সাঁই জাতিতে মুসলমান এবং পেশায় পাল্কী বাহক বেহারা সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। তিনি লালনকে লেখাপড়া শেখাবার চেষ্টা করেছিলেন। লালন লেখাপড়া জানতেন না। নিরক্ষর লালন বিষ্ময়কর তত্ত্বজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
এ সময় একদিন গোচারনরত অবস্থায় তিনি ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে এক গাছের ছায়ায় যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন ঐ পথে গমনকারী কুলবাড়িয়া গ্রামের সিরাজ সাঁইয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ও আলাপ হয়। নিঃসন্তান সিরাজ সাঁই এতিম লালনকে পালক পুত্ররুপে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলে লালন তাতে সম্মত হন। এভাবেই তিনি তার ভাবী জীবনের পথ প্রদর্শক গুরু সিরাজ সাঁই এর সান্নিধ্যে আসেন। সিরাজ সাঁই জাতিতে মুসলমান এবং পেশায় পাল্কী বাহক বেহারা সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। তিনি লালনকে লেখাপড়া শেখাবার চেষ্টা করেছিলেন। লালন লেখাপড়া জানতেন না। নিরক্ষর লালন বিষ্ময়কর তত্ত্বজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
লালনকে সিরাজ সাঁই বাউল মতবাদে দীক্ষা দান করেন। তিনিও গুরুর সাহচর্যে ক্রমে উক্ত তত্ত্বের বোদ্ধা রুপে গড়ে
ওঠেন। তাঁর ছাব্বিশ বছর বয়সে ১২০৫ সনে
(ইংরেজী ১৭৯৮ সালে) সিরাজ দম্পত্তি পরলোকগমন করেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি গৃহত্যাগ করে ফকিরী বেশে নবদ্বীপ অভিমুখে গমন করেন। নবদ্বীপ পৌছে তিনি পদ্মাবতী নামে এক বৈষ্ণব বিধবা রমনীর
আশ্রয় লাভ করেন যাকে তিনি "মা' বলে
ডাকতেন। এখানে তিনি দীর্ঘ সাত বছর
অতিবাহিত করেন। লালন নবদ্বীপে যোগী ও তান্ত্রিক
সাধকদের ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে আসেন। এখানে
তিনি বৈষ্ণব শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন, যা
তাঁর বাউল মতবাদের উপর প্রভাব ফেলেছিল। ১৮০৫ সালে
লালন নবদ্বীপ ত্যাগ করে কাশী, বৃন্দাবন, পুরী প্রভৃতি তীর্থে গমন করেন। এমনিভাবে
দশ বছর পরিভ্রমণের পরে তিনি ১৮১৫ সালে নদীয়ায় ফিরে উত্তর বঙ্গের খেঁতুরীর মেলা
দেখতে যান। খেঁতুরী থেকে ফেরার পথে তিনি
গুটি বসন্তে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর সঙ্গীরা তাঁকে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রামে
কালীগঙ্গা নদীর পাশে ফেলে রেখে যায়। ঐ
গ্রামের তাঁতী সম্প্রদায়ের মলম কারিগর অসুস্থ লালনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে মাসাধিককাল
সেবাযত্বে সুস্থ করে তোলেন। এ সময়ে
তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। মলম কারিগর
লালন শাহের সাধনা সম্পর্কে জ্ঞাত হবার পর তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিজ বাড়ীর ষোল
বিঘা জমি লালনকে উইল করে দেন। সেখানেই
গড়ে উঠে লালনের আখড়া। লালন শাহের পত্নীর নাম
ছিল বিশখা। তাঁর স্ত্রীর নাম সর্ম্পকেও
গবেষকগণ একমত নন। তাঁর কবর লালন শাহের কবরের
পাশেই অবস্থিত। ১৮৯০ সালের ১৭ই অক্টোবর
(১২৯৭সালের ১ কার্তিক) শুক্রবার ভোর পাঁচটায় ১১৬ বছর বয়সে লালন শাহ ছেঁউড়িয়ার
আখড়ায় দেহত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে নিঃসন্তান লালন
তাঁর স্ত্রী, পিয়ারী নামে এক ধর্মকন্যা এবং
অসংখ্য শিষ্য ও ভক্ত রেখে যান।
No comments:
Post a Comment