Wednesday, October 24, 2012

Jhenaidah: জেলার কতিপয় বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

কালীপদ বসু (কে,পি বসু) (১৮৬৫-১৯১৪)         Back to ঝিনাইদহ জেলা
বাংলার বিখ্যাত গণিতবিদ অধ্যাপক কালীপদ বসু (কে,পি বসু) ১৮৬৫ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে জম্মগ্রহণ করেনতাঁর পিতা মহিমা চরণ বসুকে,পি বসুর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় নিজ গ্রামের পাঠশালায় মেধাবী শিক্ষক নছিমউদ্দিন মন্ডলের কাছেকে,পি বসুর গণিতমনস্কতা সৃষ্টিতে তাঁর ভূমিকা অপরিসীমতিনি ১৮৯২ সালের দিকে ঢাকা কলেজে গণিত শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেনএবং আমৃত্যু ঐ কলেজের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেনকে,পি বসু স্বগ্রামের মেঘমালা ঘোষকে বিয়ে করেনব্যক্তিগত জীবনে এ মহান গণিতবিদ অত্যন্ত সদালাপী, অমায়িক ও অনাড়ম্বর ছিলেন
শিক্ষকতা জীবনে তিনি পাঠদানের মধ্যেই নিজের কর্মকান্ডকে সীমাবদ্ধ রাখেননি১৮৮২ সালে হান্টার কমিশনের সুপারিশকৃত ইউরোপীয় সংস্করণ আধুনিক এলজাবরা' বইটির অধ্যয়ন ও অনুশীলনের পথকে সুগম, প্রাঞ্জল ও সহজ করে তোলেনঅসংখ্য নতুন অংক উদ্ভাবন করে এ শাস্ত্রের কলেবর বৃদ্ধি ও উৎকর্ষ সাধন করেছেনঅধ্যাপনার সাথে সাথে তিনি এ্যালজাবরা ও জ্যামিতি শাস্ত্রের উপর গবেষণা চালিয়ে যানতাঁর ঐকান্তিক সাধনায় এলজাবরা মেড ইজি' মডার্ণ জিওমেট্রি' ইন্টারমিডিয়েট সলিড জিওমেট্রি' প্রভৃতি গ্রন্থ প্রণীত হয়প্রকাশনা শিল্পের প্রতিও তার মনোযোগ আকৃষ্ট হয়তিনি কলকাতায় কে,পি বসু পাবলিশিং কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন
মেধা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের বলে তিনি প্রতিষ্ঠা অর্জন ও প্রভূত অর্থের মালিক হয়েছিলেন১৯০৭ সালে তিনি স্ব-গ্রামে প্রাসাদোপম এক ভবন নির্মাণ করেনতিনি ১৯১৪ সালে পার্নিসাস ম্যালেরিয়া জ্বরে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেনতাঁর মৃতদেহ ঝিনাইদহ এসে পৌঁছালে ঝিনাইদহের সকল অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যায়শোকাভিভূত হাজার হাজর মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নবগঙ্গা নদীর তীরে উপস্থিতত হয়ঝিনাইদহ শহরে তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে

কবি গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪)
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে ১৮৯৭ সালে বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি গোলাম মোস্তফা জম্মগ্রহণ করেনতাঁর পিতা কাজী গোলাম রাব্বানী ও মাতা বিবি শরীফুন্নেসাকবি শৈলকুপা হাইস্কুল থেকে ১৯১৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, দৌলতপুর কলেজ থেকে ১৯১৬ সালে আই,এ এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯১৮ সালে বি,এ পাশ করেন১৯২০ সালে ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর সরকারী হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষকরুপে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেনপরে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি,টি পাশ করেন এবং প্রধান শিক্ষক পদে উন্নীত হয়ে ১৯৪৬ সালে ফরিদপুর জেলা স্কুলে যোগদান করেন১৯৫০ সালে তিনি চাকুরী হতে অবসর গ্রহণ করেন১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার গঠিত ভাষা সংস্কার কমিটির সচিব ছিলেনগীত রচনা, কাব্য, উপন্যাস, জীবনী, অনুবাদসহ সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তাঁর স্বছন্দ পদচারণা ছিল১৯১৩ সালে দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে আদ্রিয়ানোপল উদ্ধার' কবিতাটি প্রকাশিত হয়
তাঁর প্রকাশিত গ্রস্থঃ কাব্য-রক্তরাগ (১৯২৪), খোশরোজ (১৯২৯), কাব্য কাহিনী (১৯৩২), সাহারা (১৯৩৬), হাসনাহেনা (১৩৩৪), তারানা-ই-পাকিস্তান (১৯৪৮), বনি-আদম (১৯৫৮); উপন্যাস-রুপের নেশা (১৩২৬), ভাঙ্গাবুক (১৩২৮), একমন এক প্রাণ; জীবনী-বিশ্বনবী (১৯৪২) ; ইসলাম বিষয়ক গ্রমহ-ইসলাম ও জেহাদ (১৯৪৭), ইসলাম ও কমিউনিজম (২য় সং -১৯৪৯), মরু দুলাল; প্রবন্ধ পুস্তক-আমার চিন্তাধারা (১৯৬২) ; অনুবাদগ্রন্থ-মুসাদ্দাস-ই-হালী (১৯৪৯), মুরু দুলাল; প্রবন্ধ পুস্তক-আমার চিন্তাধারা (১৯৫৮) শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া (১৯৬০), জয়পরাজয়এছাড়া গীতি সঞ্চয়ন (১৯৬৮) এবং গোলাম মোস্তফা কাব্য গ্রন্থাবলী (১৯৬০) বিশ্বনবী' গ্রন্থখানি গদ্য সাহিত্য তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদানতাঁর কাব্যের বৈশিষ্ট্য হল সহজ সাবলীল শিল্পসম্মত প্রকাশ ও ছন্দ লালিত্যতাঁর কাব্যে মুসলিম জাতীয়তাবাদী চেতনা প্রকাশ পায়তিনি গীতিকার ও গায়ক ছিলেনতাঁর নিজের সুরারোপিত বেশ কয়েকটি গানের রেকর্ডও পাওয়া যায়১৯৫২ সালে যশোর সাহিত্য সংঘ কাব্য সুধাকর' ও ১৯৬০ এ পাকিস্তান সরকার সিতারা-ই-ইমতিয়াজ' উপাধি দেয়১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন

কবি পাঞ্জু শাহ (১৮৫১-১৯১৪)
মরমী সাধক পাঞ্জু শাহ ১৮৫১ সালে (বাংলা ১২৫৮) সালে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপায় জম্মগ্রহণ করেনতাঁর পিতা খাদেম আলী খোন্দকার, মাতা জোহরা বেগমখাদেম আলী খোন্দকার তাঁর পিতার মৃত্যুর পর পিতার জমিদারী প্রাপ্ত হনপাঞ্জু শাহ পারিবারিক নিয়মানুযায়ী বাড়ীতে আরবী ও ফারসী ভাষা গৃহশিক্ষকের নিকট শিক্ষা গ্রহণ করেনঅতঃপর তিনি মহর আলী বিশ্বাসের কাছে গোপনে বাংলা ভাষা শেখেন
শৈশব কাল থেকেই তিনি মরমীবাদের প্রতি আকৃষ্ট হলেও পিতার ভয়ে তিনি তা প্রকাশ করতেন নাপিতার মৃত্যুর পরই তিনি প্রকাশ্যে হরিশপুরের মরমী সাধকদের কাছে যাতায়াত শুরু করেন এবং অচিরেই মরমীবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে হিরাজতুল্লাহ খন্দকারের কাছে দীক্ষা নিয়ে মরমী সাধনায় ব্রতী হনএ সময়ে তিনি প্রচুর আধ্যাত্মিক সঙ্গীত রচনা করেন যা সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েএছাড়াও তিনি ছহি ইস্কি ছাদেকী গওহোর' নামে একখানি কাব্য গ্রন্থ রচনা করেনএ কাব্যখানি তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কীর্তি হিসেবে বিবেচিত

মরমী কবি লালন শাহ (১৭৭২-১৮৯০)
মরমী বাউল কবি লালনশাহ বাংলা বাউলকুলের শিরোমনিতাঁর মনীষার দীপ্তি দেশ ও কালের গন্ডী পেরিয়ে   চিরন্তনতায় সতত সঞ্চরণশীললোকায়ত বাংলার অন্যান্য অনেক প্রতিভাবানদের মতই তাঁর সঠিক পরিচয় আজও স্থিরীকৃত নয়তাঁর জম্মস্থান সম্পর্কে পন্ডিত ও গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছেতাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্য দুদ্দুশাহের বক্তব্য অনুযায়ী ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামে ১১৭৯ সালের ১কার্তিক (১৭৭২, ১৪ অক্টোবর) লালন শাহ জম্ম গ্রহণ করেনতাঁর পিতা দরীবুল্লাহ দেওয়ান, মাতার নাম আমিনা খাতুনলালন অতি শৈশবে পিতৃ মাতৃ হারা হয়ে ঐ গ্রামেই তাঁর এক আত্মীয় ইনু কাজীর বাড়িতে আশ্রয় লাভ করেনএ সময় একদিন গোচারনরত অবস্থায় তিনি ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে এক গাছের ছায়ায় যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন ঐ পথে গমনকারী কুলবাড়িয়া গ্রামের সিরাজ সাঁইয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ও আলাপ হয়নিঃসন্তান সিরাজ সাঁই এতিম লালনকে পালক পুত্ররুপে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলে লালন তাতে সম্মত হনএভাবেই তিনি তার ভাবী জীবনের পথ প্রদর্শক গুরু সিরাজ সাঁই এর সান্নিধ্যে আসেনসিরাজ সাঁই জাতিতে মুসলমান এবং পেশায় পাল্কী বাহক বেহারা সম্প্রদায়ের লোক ছিলেনতিনি লালনকে লেখাপড়া শেখাবার চেষ্টা করেছিলেনলালন লেখাপড়া জানতেন নানিরক্ষর লালন বিষ্ময়কর তত্ত্বজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন
লালনকে সিরাজ সাঁই বাউল মতবাদে দীক্ষা দান করেনতিনিও গুরুর সাহচর্যে ক্রমে উক্ত তত্ত্বের বোদ্ধা রুপে গড়ে ওঠেনতাঁর ছাব্বিশ বছর বয়সে ১২০৫ সনে (ইংরেজী ১৭৯৮ সালে) সিরাজ দম্পত্তি পরলোকগমন করেনঅল্প দিনের মধ্যেই তিনি গৃহত্যাগ করে ফকিরী বেশে নবদ্বীপ অভিমুখে গমন করেননবদ্বীপ পৌছে তিনি পদ্মাবতী নামে এক বৈষ্ণব বিধবা রমনীর আশ্রয় লাভ করেন যাকে তিনি "মা' বলে ডাকতেনএখানে তিনি দীর্ঘ সাত বছর অতিবাহিত করেনলালন নবদ্বীপে যোগী ও তান্ত্রিক সাধকদের ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে আসেনএখানে তিনি বৈষ্ণব শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন, যা তাঁর বাউল মতবাদের উপর প্রভাব ফেলেছিল১৮০৫ সালে লালন নবদ্বীপ ত্যাগ করে কাশী, বৃন্দাবন, পুরী প্রভৃতি তীর্থে গমন করেনএমনিভাবে দশ বছর পরিভ্রমণের পরে তিনি ১৮১৫ সালে নদীয়ায় ফিরে উত্তর বঙ্গের খেঁতুরীর মেলা দেখতে যানখেঁতুরী থেকে ফেরার পথে তিনি গুটি বসন্তে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর সঙ্গীরা তাঁকে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রামে কালীগঙ্গা নদীর পাশে ফেলে রেখে যায়ঐ গ্রামের তাঁতী সম্প্রদায়ের মলম কারিগর অসুস্থ লালনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে মাসাধিককাল সেবাযত্বে সুস্থ করে তোলেনএ সময়ে তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়মলম কারিগর লালন শাহের সাধনা সম্পর্কে জ্ঞাত হবার পর তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিজ বাড়ীর ষোল বিঘা জমি লালনকে উইল করে দেনসেখানেই গড়ে উঠে লালনের আখড়ালালন শাহের পত্নীর নাম ছিল বিশখাতাঁর স্ত্রীর নাম সর্ম্পকেও গবেষকগণ একমত ননতাঁর কবর লালন শাহের কবরের পাশেই অবস্থিত১৮৯০ সালের ১৭ই অক্টোবর (১২৯৭সালের ১ কার্তিক) শুক্রবার ভোর পাঁচটায় ১১৬ বছর বয়সে লালন শাহ ছেঁউড়িয়ার আখড়ায় দেহত্যাগ করেনমৃত্যুকালে নিঃসন্তান লালন তাঁর স্ত্রী, পিয়ারী নামে এক ধর্মকন্যা এবং অসংখ্য শিষ্য ও ভক্ত রেখে যান

কবি পাগলা কানাই (১৮৯০-১৮৮৯)
কবি পাগলাকানাই একজন প্রতিভাধর লোককবি ছিলেনলোক-সাধনা ও মরমী সঙ্গীতের ঐতিহ্যমন্ডিত উর্বর ভূমি ঝিনাইদহের সন্নিকটে লেবুতলা (মতান্তরে বেড়বাড়ী) গ্রামে ১৮৯০ সালের মার্চ (বাংলা ১২২৬ সালের ২৫ফালগুন) মাসে তিনি জম্মগ্রহণ করেনকুড়ন-মোমেনার তিন সন্তানের মধ্যে পাগলাকানাই ও উজল দু'পুত্র এবং স্বরনারী (মতান্তরে সরনারী) এক কন্যা ছোটবেলা থেকেই পাগলাকানাই দুরন্ত প্রকৃতির, পাগলাটে স্বভাবের এবং অধ্যাত্ম প্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলেনএ খেয়ালীপনার জন্যে শৈশবে স্মেহবশতঃ লোকে তাঁর নামের সাথে পাগলা' অভিধাটি যুক্ত করেতাঁর কর্মকীর্তির সাথে এ পাগলা উপাধিটি অভিন্ন সূত্রে গ্রথিত হয়েছে
বাল্যকালে পিতৃহারা হওয়ায় তিনি হয়ে ওঠেন ভবঘুরেআর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কানাইয়ের লেখাপড়া শেখা সম্ভব হয়নিপিতার মৃত্যুর পর পাগলা কানাই লেবুতলা থেকে এসে কালীগঞ্জের ভাটপাড়া গ্রামে কিছুকাল অবস্থান করেনপরবর্তী কালে হরিণাকুন্ডুর বলরামপুর ভরম মন্ডলের বাড়ী কিছুদিন রাখাল হিসেবে কাজ করার পর ভগ্নী স্বরনারীর শ্বশুরালয় বেড়বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করেনএ বেড়বাড়ী গ্রামই প্রকৃত পক্ষে কানাইয়ের কীর্তিধারিণী বলে পরিচিতবোনের বাড়িতে তাঁর কাজ ছিল গরু চরানোতিনি গরু চরাতে গিয়ে ধুয়ো জারীগান গাইতেন এবং উপস্থিত সবাই তাঁর সঙ্গীত মুগ্ধ হয়ে শুনতএভাবে ধুয়োজারীতে তাঁর হাতে খড়ি হয়আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর কোন সঙ্গীত শিক্ষা না থাকলেও এখানকার তৎকালীন আউল-বাউল, সাধু-ফকির প্রভৃতি গুণীজনের পদচারণা সর্বোচরি জীবন ও জগত সম্পর্কে কবি আত্মার আত্ম-জিজ্ঞাসা ও আত্ম-অন্বেষণ তাঁকে প্রখর অধ্যাত্মজ্ঞানে পরিপূর্ণ করে তোলেতাঁর গানে ইসলাম ও আল্লাহর প্রিয় নবীর প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ পায় পাগলা কানাই নিরক্ষর হলেও তাঁর স্মৃতি ও মেধা ছিল অত্যন্ত প্রখরতিনি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে একের পর এক গান রচনা করতে পারতেন
এ পর্যন্ত পাগলা কানাই রচিত গানের মধ্য মাত্র শ'তিনেক সংগৃহীত হয়েছেমুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, , মাযহারুল ইসলাম, আবু তালিব, আমিন উদ্দিন শাহ, দুর্গাদাস লাহিড়ী, উপেন্দ্রনাথ ভট্রাচার্য প্রমুখ মনীষীগণ পাগলা কানাইয়ের গানের সংগ্রহ ও গবেষণা করেছেনএ মহান বাউল কবি ১৮৮৯ সালের জুলাই (১২৯৬ সালের ২৮ আষাঢ়) ইহলোক ত্যাগ করেন

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান (১৯৫৩-১৯৭১)
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের মিছিলে যে সাত জনের আত্মত্যাগ ও বীরত্বে জাতি তাঁদেরকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে মরণোত্তর সম্মান দিয়েছে, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান তাঁদের অন্যতম১৯৫৩ সালে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোর্দ্দ খালিশপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে তিনি জম্ম গ্রহণ করেনতাঁর পিতা আক্কাস আলী ও মাতা কায়দাছুন নেছাঅতি শৈশব থেকেই বাস্তবতার সাথে তাঁকে প্রতি নিয়ত সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়েছিলদারিদ্রের নির্মমতা তাকে উচ্চ শিক্ষার পথ থেকে বঞ্চিত করলেও জীবন সংগ্রামী হামিদুর পিছিয়ে থাকতে চাননিতাই ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি যোগ দেন সেনাবাহিনীতে২৫শে মার্চে ঢাকায় পাকিস্থানী সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর অতর্কিত হামলা চালালে দেশপ্রেমিক হামিদুর রহমান দেশ মাতৃকার মুক্তির স্বপ্নে যোগ দেন মুক্তি বাহিনীতে অংশগ্রহণ করেন একের পর এক যুদ্ধে
১৯৭১ এর অক্টোবরহামিদুর রহমান মুক্তিবাহিনীর সাহসী সদস্য হিসেবে যুদ্ধ করছিলেন সিলেট শ্রীমঙ্গল এলাকায়এখানে অবস্থিত ধলই বি,,পি,তে পাকিস্থানীদের শক্ত ঘাটি দখল করতে পারলে মুক্ত করা যায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল২৮শে অক্টোবর অতি প্রত্যুষে মুক্তিবাহিনী শুরু করল আক্রমনচা বাগানের ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলেন হামিদুর তাঁর দলের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কাইয়ুমের নির্দেশে একটি হালকা মেশিনগান সাথে নিয়েশত্রু ঘাটির একেবারে কাছে গিয়ে তিনি আকস্মিক হামলা চালালেন শত্রু দলের উপরনিহত হল প্রতিপক্ষের অধিনায়কসহ কয়েকজন পাকিসহানী সৈন্যশত্রু সৈন্যরা পরিস্থিতি সামলে নিয়ে শুরু করল পাল্টা আক্রমনকিন্তু হামিদুর রহমান পিছু হটলেন নাপ্রাণপণে লড়াই চালিয়ে গেলেনহঠাৎ একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হল তাঁর কপালেহামিদুর রহমান বীরত্বের সাথে লড়াই করে শহীদ হলেনপাঁচ দিন অবিরাম যুদ্ধের পর মুক্ত হল ধলই বি,,পিহামিদুর রহমানের আত্মত্যাগ রচনা করল আমাদের মুক্তির পথমুক্তিযুদ্ধে বিরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ট খেতাবে ভূষিত হনসুদীর্ঘ ৩৬ বছর পর তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় এবং ১১ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে ঢাকার মিরপুরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়
এ মহান বীরের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিগত ১৪-০১-২০০৮ তারিখে শহীদের নিজগ্রাম খোর্দ্দখালিশপুরের নাম পরিবর্তন করে 'হামিদ নগর' করা হয়েছে এবং হামিদ নগরে তাঁর নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজমাঠে ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এর সার্বিক সহযোগিতায় ৫৫,৯৮,৩৪০/৪৩ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার গ্রন্থাগারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ২৩৪৯ টি বইএটি নির্মানে কারিগরি সহযোগিতা করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন জেলা পরিষদ, ঝিনাইদহএছাড়া তাঁর নিজ নামে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝিনাইদহ জেলা শহরের স্টেডিয়ামটি তাঁর নামে, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তাঁর স্মরনে একটি ডাক টিকিট প্রকাশ করেছেবাংলাদেশ সরকার তাঁর পৈতৃক ভিটায় একটি পাকা বাড়ী নির্মাণ করেছেএ নির্ভীক অকুতোভয় বীর সৈনিক এদেশের মানুষের হৃদয়ে চির জাগরুক হয়ে থাকবেন

বীর প্রতীক সিরাজুল ইসলাম
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে বীর প্রতীক সিরাজুল ইসলাম জম্মগ্রহণ করেনতাঁর মাতা আফিয়া খাতুনআর্থিক অসচ্ছলতার জন্যে সিরাজুল ইসলাম লেখাপড়ায় বেশী দূর অগ্রসর হতে পারেননি১৯৬৯ সালের ৯ আগষ্ট তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেনতাঁর সৈনিক নং ল্যান্সনায়েক ৪৯৪৯০৯৬৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি দেশ মাতৃকার মুক্তিরর লক্ষ্যে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করেনযুদ্ধকালে ময়মনসিংহের কামালপুরে শত্রু বাহিনীর অতর্কিত আক্রমনে এ অসীম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হনঅকুতোভয় এই বীরের শৌর্যময় বীরত্বের জন্য জাতি তাঁকে ভূষিত করেছে 'বীর প্রতীক' সম্মামনায়তাঁর বীরত্বগাঁথা এদেশের মানুষের হুদয়ে চির ভাস্কর হয়ে আছেতাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিজ গ্রামে একটি ক্লাব গড়ে উঠেছে

বাঘা যতীন (১৮৮০-১৯৯৫)
উপমহাদেশে বৃটিশ দখলদায়িত্ব বিরোধী আন্দোলনে যাঁরা পথিকৃৎ, দেশ মাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে যাঁরা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে উজ্জীবিত করে গেছেন এ উপমহাদেশের অগণিত মুক্তিকামী মানুষকে, তাদের মধ্যে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় অন্যতমতিনি ১৮৮০ সালে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার রিষখালী গ্রামে জম্মগ্রহণ করেনতাঁর পিতা ঊমেশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও মাতা শরৎ শশী দেবীতাঁর পিতা ছিলেন একজন শিক্ষক
পাঁচ বছর বয়সে তাঁর পিতৃ বিয়োগ ঘটেএরপর তাঁর মা কন্যা বিনোদবালা ও শিশুপুত্র যতীন্দ্রনাথকে নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার কয়া গ্রামে পিত্রালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেনতিনি কৃষ্ণনগর এ,ডি,হাইস্কুল থেকে ১৮৯৮ সালে কৃতিত্বের সাথে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হনযতীন্দ্রনাথ কলকাতা সেন্ট্রাল কলেজে এফ,এ শ্রেণীতে ভর্তি হনএ সময় তিনি টাইপ রাইটিং ও শর্টহ্যান্ড শেখেনদ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালে পড়াশোনা বাদ দিয়ে আমন টি কোম্পানীতে ষ্টেনোগ্রাফারের চাকুরী নেনঅতঃপর তিনি এ চাকুরী পরিত্যাগ করে মজফফরপুরের ব্যারিষ্টার ও 'ত্রিহুত কুরিয়ার' পত্রিকার সম্পাদক মিঃ কেনেডীর সচিব হিসেবে চাকুরী গ্রহণ করেনসেখানে মন না টেকায় তিনি পুনরায় কলকাতায় ফিরে আসেন এবং ইন্দুবালার সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন
১৯০৩ সালে তিনি বাংলা সরকারের চীফ সেক্রেটারী মিঃ হুইলার এর ষ্টেনোগ্রাফার হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেনএ সময় তিনি বিভিন্ন স্থানে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত থাকতেনএভাবেই তিনি খোদ বৃটিশ সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেনতিনি বিপ্লবী আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার দায়ে গ্রেফতার হন এবং এক বছরের জন্য সাজা পান এবং তাঁকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়এ সময় তিনি গোপনে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বিপ্লবী সংগঠন এবং ঝিনাইদহের নলডাঙ্গা-বলরামপুরে বিপ্লবীদের ঘাটি গড়ে তোলেনতাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমেই বাংলা থেকে উত্তর প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখন্ডের ইতঃস্তত বিচ্ছিন্ন সংগঠনগুলো একই কর্মকান্ডের অধীনে আসে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মান সরকারের কয়েক জাহাজ অস্ত্র উপমহাদেশের বিপ্লবীদের জন্য সংগৃহীত হয়কিন্তু পথিমধ্যে জাহাজের অস্ত্র ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ে গেলে ইংরেজ সৈন্যরা তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেঅবশেষে রাদারফোর্ডের নেতৃত্বে বৃটিশ বাহিনী বুড়ীবালাম নদীর তীরে তাঁদের উপর চড়াও হয়দীর্ঘ সময় গুলি বিনিময়ের পর তাঁর সঙ্গী চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরী শহীদ হন ও অন্য সবাই বুলেটে জর্জরিত হয়ে বন্দী অবস্থায় বালেশ্বর হাসপাতালে নীত হনপরের দিন ১০ সেপ্টেম্বর ১৯১৫ ভোর বেলা গুরুতর আহত যতীন্দ্রনাথ চির নিদ্রায় ঢলে পড়েনসাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ সরকার তাঁর মৃতদেহটিও গুম করে দেয়তিনি মুক্তিকামী দেশবাসীর স্বপ্নে ও কল্পনায় চিরভাস্কর হয়ে থাকবেনমৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, কন্যা আশালতা ও পুত্র তেজেন্দ্রনাথকে রেখে যান
তাঁর স্মৃতিতে মাদ্রাজে এবং তাঁর জম্মভূমি ঝিনাইদহে রয়েছে বাঘা যতীন সড়ক, বাঘা যতীন ক্লাব প্রভৃতি

সর্দার সাখাওয়াতুল্লা (সফতুল্লা)
শৈলকুপা উপজেলায় সর্দার সাখাওয়াতুল্লা জম্মগ্রহণ করেনতিনি একজন সাধারন কৃষক ছিলেনবৃটিশ আমলে অত্যাচারী নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে অমানুষিক নির্যাতন ভোগ করেও ইংরেজদের কাছে মাথা নত করেননিবৃটিশ শাসন আমলে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় নীল চাষ করতো ইংরেজ বেনিয়ারা১৮৬০ সালের দিকে এ অঞ্চলে নীল চাষের বিরুদ্ধে নির্যাতিত কৃষকেরা বিদ্রোহ শুরু করে১৮৮৯ সালে সিন্দুরিয়া কনসার্নেস অধীন শৈলকুপা উপজেলার বিজুলিয়া কুঠির আওতাধীন ৪৮টি গ্রামের কৃষকরা নীল চাষ বন্ধ করে দেয়তারা বিজুলিয়া নীল কুঠি আক্রমন করেএসব কৃষকদের মধ্যে বসন্ত কুমার, বঙ্কুবিহারী ও সর্দার সাখাওতুল্লা ওরফে সফতুল্লা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যসর্দার সাখাওয়াতুল্লা বিজুলিয়ার পাশে খোদবাড়িয়া গ্রামের অধিবাসী ছিলেনবিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে নীলকররা সাখাওয়াতুল্লাকে ঘোড়ার জিনের সাথে বেঁধে টেনে-হিচড়ে নীলকুঠিতে নিয়ে যায় এবং ৭ দিন নীলকুঠির অন্ধকার প্রকোষ্টে বন্দী রেখে অমানুষিক অত্যাচার করেপরে কৃষকরা আবার কুঠি আক্রমনের প্রস্তুতি নিলে অত্যাচারী নীলকররা ভয়ে তাঁকে ছেড়ে দেয়

দুঃখী মাহমুদ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আরাপপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জম্ম গ্রহণ করেনপেশায় তিনি রিকশা চালক ছিলেনবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম সম্মুখ সমর-বিষয়খালী প্রতিরোধ যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন১৬ এপ্রিল ১৯৭১, বেগবতী নদীর তীরে পাক হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের কাটা বাংকারে যুদ্ধরত অবস্থায় তিনি শহীদ হনতাঁর মৃতদেহের খোঁজ পাওয়া যায়নি

শুকচাঁদ শাহ (১৮৮৭-১৯৫০)
হরিণাকুন্ডু উপজেলার চটকাবাড়িয়া গ্রামে ১৮৮৭ সালে (১৩১৪ সন) জম্ম গ্রহণ করেনতাঁর পিতা শীতল মন্ডলশুকচাঁদের আসল নাম শুকুর মন্ডলফকিরি মত গ্রহণের পর তিনি 'শুকচাঁদ' নামে পরিচিত হনবাল্যকালে তিনি কোন বিদ্যালয়ে যাবার সুযোগ পাননি শুকচাঁদ অমূল্য শাহের গানের প্রতি আকৃষ্ট হনঅমূল্য শাহ তাঁকে সঙ্গীত শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেনতিনি সঙ্গীত গুরু অমূল্য শাহের কাছে দরবেশী দীক্ষা গ্রহণ করেনশুকচাঁদ অমূল্য শাহের কাছে লালন সঙ্গীতের তালিম নেনতিনি খোদাবক্সের নিকট থেকেও লালন সঙ্গীতে দীক্ষা নিয়ে একজন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী হয়ে ওঠেনশুকচাঁদ শাহ চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে আখড়া তৈরি করেনশুকচাঁদ শাহের অনেক শিষ্য ছিলেনতিনি ১৯৫০ সালে (১৩৫৭সন) ইন্তেকাল করেনশুকচাঁদের ভাবসঙ্গীতের সংখ্যা অল্প হলেও গুনগত মান অতুলনীয়তাঁর একটি গানে আছে-
'জানগা আগে মানুষের বেনা
মানুষের নাই জাতির বাড়াই
মানুষ ভজলে যায় রে জানা'। 

মোবারক আলী মিয়া (বড় মিয়া)
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও রাজন্যবর্গের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার এক বলিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত মোবারক আলী বড় মিয়াতিনি কালীগঞ্জ পৌরসভার ফয়লা গ্রামে জম্ম গ্রহণ করেনতাঁর পিতা কফিল উদ্দিন বিশ্বাস১৯৪৩-৪৪ সালে তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেনতিনি ঋণ শালিসি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট এবং যশোর জেলা বোর্ডের নির্বাচিত সদস্য ছিলেনরাজা পঞ্চম জর্জের রাজত্বকালে পঁচিশ বছর পূর্তি উৎসবে তাঁকে অনারারী ম্যাজিষ্ট্রেটের পদ প্রদান করা হয়মুসলিম নেতা হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি এক বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেনতাঁর নেতৃত্বে নলডাঙ্গা রাজবাড়ী থেকে ভূষণ হাইস্কুল কালীগঞ্জে স্থানাস্তর করা হয়তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে মোবারকগঞ্জ চিনি কল, মোবারকগঞ্জ রেলষ্টেশন, মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মোবারক আলী সড়কের নামকরণ করা হয়১৩৫৯ সালে প্রায় আশি বছর বয়সে এ সিংহপুরুষের জীবনাবসান ঘটে

কবি সামসুদ্দীন আহমদ (১৯১০-১৯৮৫)
কোটচাঁদপুর শহরে ১৯১০ সালের ৪ এপ্রিল জম্ম গ্রহণ করেন১৯২৯ সালে ডাক বিভাগে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেনকলকাতার বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়প্রথমে তাঁর কবিতা মহিলা ও হিন্দু ছদ্ম নামে ছাপা হতোতাঁর গ্রন্থ সংখ্যা ১৯টিএর ১টি রহস্য উপন্যাস, ৭টি কবিতা গ্রস্থ, ৩টি গানের বই, ১টি গল্প গ্রন্থ, ৬টি ছোটদের বই ও ১টি নাটকউল্লেখযোগ্য বই 'ছেলেধরা' 'দাঁড়কাক' 'কথার কথা' 'একঝাক পায়রা' 'সামসুদ্দিনের কবিতা' প্রভৃতিতিনি বেশ কিছু অধ্যাত্ম সংগীত রচনা করেছেনএ নিবেদিত প্রাণ কবি ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে ইন্তেকাল করেন

মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীঃ
১৯৩১ সালে ঝিনাইদহ উপজেলার মাজদিয়া গ্রামে তিনি জম্ম গ্রহণ করেনতাঁর প্রকাশিত বই 'রোজার সওগাত' 'ইস্রাফিল'তাঁর অপ্রকাশিত বই 'মহাসত্যের আলোকবর্তিকা' 'মর্মবাণী' 'কুরআন কাব্য'

কাজী আহসান হাবীব
খ্যাতিমান শিল্পী আহসান হাবীব শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর গ্রামে ১৯৪৯ সালে জম্ম গ্রহণ করেনতাঁর পিতা কাজী এলামুল হকতিনি ঢাকা কলেজের একজন কৃতি ছাত্র হিসেবে ১৯৭২ সালে চারুকলায় স্নাতক হনমেধা, মনন ও শৈল্পিক অনুভূতির অধিকারী আহসান হাবীবের রং তুলির ব্যবহার ছিল উঁচু মানেরতেল রং, জল রং, এ্যানামেল, এচিং ও মিশ্র মাধ্যমে তাঁর ছিল স্বাচ্ছন্দ্য বিহারস্বল্প কর্মজীবনে তিনি নিজেকে খ্যাতিমান শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেনদেশে ও বিদেশে তাঁর চিত্র প্রদর্শনীর সংখ্যা ১৫টিজাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পুরস্কার, শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কারসহ তিনি বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেনএ গুণী শিল্পী অকালে ইন্তেকাল করেন

অমূল্য শাহ (১৮৭৯-১৯৫২)
লালন শাহের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অমূল্য শাহ উল্লেখযোগ্য১৮৭৯ সালে (১২৮৬ সন) মহেশপুর উপজেলার নওদাগাঁয়ে জম্মগ্রহণ করেনপিতা খোশতোন আলী ও মাতা রাহাতন নেছার দু'পুত্র -আমির আলী ও ওয়াকিল আলীআমির আলী মরমী ভাবসাধনায় ও কণ্ঠসঙ্গীতে অসামান্য দক্ষতা অর্জন করায় তাঁর দীক্ষাগুরু জহুর শাহ কর্তৃক 'অমূল্য' নামে ভূষিত হনপ্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি মহেশপুরের হরিদাস বৈরাগীর কাছে রাগসঙ্গীতে পারদর্শী হয়ে উঠেনযন্ত্রসঙ্গীতেও তাঁর দক্ষতা জম্মেকলকাতায় তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নেনপরে তিনি বর্ধমান-বীরভূমের বৈষ্ণব-বাউলদের সংস্পর্শে আসেনতিনি কীর্তন ও বাউল গানের প্রতি আকৃষ্ট হনপরবর্তীতে তিনি হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিয়ারঘাটার খোদাবকশ শাহের আখড়ায় যানএ আখড়ায় লালন সঙ্গীতের প্রতি তিনি আসক্ত হনএখানে তিনি লালন সঙ্গীত সংগ্রহ এবং সুর আয়ত্ব করতে মনোনিবেশ করেনঅমূল্য শাহ লালন সঙ্গীতের ও যুগস্রষ্টা পুরুষতাঁর সুরেলা আবেগী কন্যা এবং দীর্ঘ ত্রিশ বছর ভাবসঙ্গীত সাধনায় মরমী লালন সঙ্গীত জনপ্রিয় সাঙ্গীতিক মর্যাদা লাভে সমর্থ হয়েছে
অমূল্য শাহ শুধু সঙ্গীত শিল্পীই ছিলেন না, তিনি একজন গীতিকারও ছিলেনতাঁর রচিত দু'টি উল্লেখযোগ্য গানঃ
পাখি উড়ে গেল, সাধের পিঞ্জর ভাঙ্গিয়া,
তোরা ধর গো ধর আমার প্রাণবন্ধুরে,
লোকমুখে ছড়িয়ে থাকা তাঁর অসংখ্য লোকসংগীত আজও সংগৃহীত হয়নিভাবসঙ্গীতের বিশেষ ব্যক্তিত্ব অমূল্য শাহ (আমির আলী) ১৯৫২ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন

No comments:

Post a Comment