প্রাচীনকালে
বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর পশ্চিম দিকে নবগঙ্গাঁ নদীর ধারে ঝিনুক কুড়ানো শ্রমিকের
বসতি গড়ে ওঠে বলে জনশ্রুতি আছে। সে সময়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গেঁর কোলকাতা থেকে ব্যবসায়ীরা ঝিনুকের মুক্তা সংগ্রহের জন্যে
এখানে ঝিনুক কিনতে আসতো। সে সময় ঝিনুক প্রাপ্তির
এই স্থানটিকে ঝিনুকদহ বলা হতো। সে সময়
ঝিনুক থেকে মুক্তা সংগ্রহের মাধ্যমে এবং ঝিনুক পুড়িয়ে চুন তৈরী করে তা বিক্রি করে
মানুষ অর্থ উপার্জন করতো।
অনেকের মতে ঝিনুককে আঞ্চলিক ভাষায় ঝিনেই, ঝিনাই
এবং দহ অর্থ বড় জলাশয় ও ফার্সি ভাষায় দহ বলতে গ্রামকে বুঝানো হতো। সেই অর্থে ঝিনুকদহ বলতে ঝিনুকের জলাশয় অথবা ঝিনুকের গ্রাম
বুঝাতো। আর এই ঝিনুক এবং দহ থেকেই
ঝিনুকদহ বা ঝিনেইদহ,
যা- রূপান্তরিত হয়ে আজকের ঝিনাইদহ নামকরন হয়েছে।
অন্য কিংবদন্তি থেকে জানাযায়, এক ইংরেজ সাহেব এই এলাকা
দিয়ে নৌকাযোগে নবগঙ্গাঁ নদী পর হচ্ছিলেন। অনেক
লোকজন তখন নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত ছিল। উপস্থিত লোকদের কাছে সাহেব তখন এলাকাটির নাম জানতে চান। লোকেরা তার কথা বুঝতে না পেরে ভেবে নেন যে নদী থেকে তারা কি জিনিস তুলছে তার
নাম জানতে চাচ্ছেন। এই মনে করে লোকেরা সাহেবকে বলেন
ঝিনুক বা ঝিনেই। এতে ইংরেজ সাহেব ধরে নেন
জায়গাটির নাম ঝেনি। এই ঝেনি শব্দটি পরে ঝেনিদা
হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ঝিনাইদহকে আঞ্চলিক ভাষায়
এখনও ঝিনেদা বলা হয়। ঝেনিদা, ঝিনেদা
আর ঝিনাইদহ যাই বলা হোক না কেন ঝিনাইদহ নামের উৎপত্তি যে ঝিনুক থেকে তা এ অঞ্চলের
মানুষের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
ঐতিহ্যবাহী ঝিনাইদহ গ্রন্থে ঝিনাইদহ সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘‘বারো
আউলিয়ার আর্শীবাদপুষ্টঃ গাজী-কালূ-চম্পাবতীর উপখ্যানধন্য; কে.পি.
বসু, গোলাম মোস্তফার স্মৃতি বিজড়িত; বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, বিপ্লবী
বীর বাঘাযতীনের শৌর্যময়;
খেজুর গুড়, কলা-পানের প্রাচুর্যমন্ডিত; পাগলাকানাই, লালন
শাহের জম্মস্থান,
কপোতাক্ষ, বেগবতী, চিত্রা, নবগঙ্গাঁর
ঝিনুকদহ এক কথায় নাম তার ঝিনাইদহ।’’
ঝিনাইদহের নামকরনের ন্যায় এর অপর ৫টি উপজেলারও রয়েছে নাম
করনের বৈচিত্রময় ইতিহাস।
No comments:
Post a Comment